________ <3 তিনটি বিচ্ছিন্ন গোলাপ এবং একটি অপ্রতিষ্ঠিত সম্পর্ক <3 ________
দুপুর আড়াইটা ।।
কক্ষ নম্বর ২০৭ ।
অপেক্ষার প্রহর বাড়ছে ।
তুমি ফিরে আসবে তো ?
পৃষ্ঠা নম্বর বাইশ ।।
মনে পড়ে , ১৪ই ফেব্রুয়ারির সেই বিকেল ?
আমি পিৎজা শপে বসে ছিলাম ।
বাইরে তোমার অসম প্রতীক্ষা !
হাতে ছিল সদ্য কেনা একটি টাটকা লাল গোলাপ ।
সাথে আমার পছন্দের চকোলেটের বাক্স ।
আমি বেরিয়ে এলাম কিছুক্ষণ পর ।
বোকা ছেলে , মনের কথা মনেই রেখে দিলে !
পৃষ্ঠা নম্বর একচল্লিশ ।।
তার ঠিক দু মাস পর ।
১৪ই এপ্রিল ।
লাল-সাদা পাঞ্জাবীটা তোমায় মানিয়েছিল বেশ ।
আমার পড়নে লাল পাড়ের শাড়ী , খোঁপায় রজনীগন্ধা ।
আমার দুষ্টু মিষ্টি ছেলেমানুষিগুলো তুমি লক্ষ্য করছিলে দূর থেকে ।
আড়চোখে দেখছিলে মাঝে মাঝেই ।
হয়ত কিছু একটা বলতে চাইছিলে ।
কিন্তু কিসের কী ?
আরেকটিবার আরেকটি লাল গোলাপ "বাসি"র ঘরে গেল !
বোবা কোথাকার !
অন্তর্মুখিতার কাছে বারবার হেরে যাচ্ছ !
পৃষ্ঠা নম্বর বাষট্টি ।।
এবারের ব্যবধান চার মাসের ।
দেখা হল রাস্তার পাশের একটি ফুচকা দোকানে ।
পাশ দিয়েই হেঁটে যাচ্ছিলে ।
হঠাৎ কি যেন একটা ভেবে ,
থমকে গেলে ।
আমাকে দেখতে পেয়েছিলে নিশ্চয়ই ।
হুম , পেয়েছিলেই তো ।
ভেতরের "না" টা কে এবার যেন দূরে সরিয়ে দিলে ।
এবার কিছু যে না বললেই নয় !
কিন্তু হাত টা যে এবার খালি ।
কিছু একটা সাথে নিলে ভাল হত না ?
"এই যে , লাল গোলাপ নিয়া যান" – গোলাপ বিক্রেতার ডাক শোনা গেল ।
রাস্তার ওই পাশটাতে ছুটে গেলে , একটি লাল গোলাপ কিনতে ।
নাহ , এই সুযোগটা আর ছেড়ে দিয়ে আসলে হবে না ।
ছয়টি মাস , সাথে ডায়েরীর পাতায় ৪০টি "নিঃশব্দ" পৃষ্ঠা !
এদের কাছেও "দায়ী" থাকার প্রায়শ্চিত্ত যে আজই শোধ করতে হবে , এখনই , এই মুহূর্তেই !
তোমার উড়ে আসতে ইচ্ছা করছিল বোধহয় ।
আর আমি , দীর্ঘ প্রতীক্ষার মুহূর্ত শেষ হওয়ার অপেক্ষায় ।
হঠাৎ একটি আর্তচিৎকার !!!
তুমি লুটিয়ে পড়লে রাস্তার উপর , গোলাপ টা ছিটকে পড়ল কোথাও !
বিচ্ছু ছেলে , এবারও ফিরে গেলে , কথাগুলো যথারীতি রয়ে গেল অদৃশ্যের খাতায় !
বাতিলের অভিধানে যোগ হল আরও একটি লাল গোলাপ !
মোট তিনটি ।
বিকেল পাঁচটা দশ ।।
"স্যার , ২০৭ নম্বর কক্ষের Patient এর অবস্থা ভাল নয় ।"
ছুটে এলেন ডাক্তার ।
কিন্তু , বেশ দেরি হয়ে গেল যে !
অস্ফুটে বললেন , "Oh, My GOD !"
. . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . .
" এই Patient এর relative রা কোথায় ?"
" স্যার, তার কাছে কোন ঠিকানা পাওয়া যায় নি , কিন্তু কিছুক্ষণ ধরে বাইরে একটি মেয়েকে কারো জন্য অপেক্ষা করতে দেখা যাচ্ছে ।"
" ডাকুন তো তাকে। "
ডাক শুনে আমি মৃতপ্রায় ।
বুকে ক্ষীণ আশা ।
কিন্তু না !
তোমার নাকে তুলো , মুখের দরজা বন্ধ !!!
এবারের দূরত্বটা কাঁটায় কাঁটায় নয় বছরের ।
ডায়েরীটা পড়া শেষ ।
চশমা খুলে কাঁদছো তুমি ।
দীর্ঘ নয় বছর পর তোমার হাতে পড়েছে আমার ডায়েরীটা ।
তুমি কাঁদছ ; মাঝে মাঝে আমায় বোবা , বিচ্ছু বলছ ।
আমি তাই কুড়িয়ে পেয়েছি "নন্দিত" স্বর্গ !
মৃত্যুর পরেও ।
তিনটে লাল গোলাপ "বাতিল" হয়নি ,
৪০ পৃষ্ঠার কথাগুলোও "অদৃশ্য" হয়নি , শব্দের খোঁজ পেয়েছে যে !
কারণ . . . . . . . . .
অন্তর্মুখিতা পেছনে ফেলে , এবার যে বলে দিচ্ছি –
" তোমায় অনেক ভালোবাসি !"
শুনতে পেয়েছ তো ?